১০০ জনের মধ্যে আমার ছেলের বাবা কে?



২৪ বছর বয়সী রুয়ান্ডার এই যুবকটি একজন যুদ্ধশিশু। সে জানে না তার বাবার পরিচয়। অবশেষে এই সত্য জানার পর সে শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কেননা তার মা দেশটির আন্দোলনের সময় সর্বনাশের শিকার হয়েছিলেন, যার ফসল এই যুবক। তিনি বলেছেন কিভাবে তিনি তার জন্মের পেছনের ঘটনা জেনেছেন। বর্তমান সময়েও এটি লজ্জাজনক হওয়ায় তাদের নাম বদলে দেয়া হয়েছে। খবর : বিবিসি বাংলা
ধরা যাক ছেলেটির নাম জ্যঁ-পিয়ের। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সময় একটি ফর্মে তার বাবা-মায়ের নাম জানতে চাওয়া হয়েছিলো। আর ঠিক ওই সময়েই নিজের বাবা সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয় তার মধ্যে। ‘আমি তাকে চিনি না- আমি তার নাম জানি না,’ তিনি বলেন।
তখন ঘরে বাবা না থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কারণ ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার ৮০০,০০০ মানুষ মারা যাওয়ায় অনেক শিশুই ছিলো পিতৃহীন। কিন্তু তারা তাদের বাবার নাম জানতো অনেক সময়ই গ্রামে মানুষের মুখে গুঞ্জন শুনেছে সে, এমনকি কয়েকবার নামও শুনেছে, কিন্তু পুরো সত্য জানতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায় তার।
তার মা ক্যারিন তাকে যে ঘটনা শুনিয়েছিলেন তা ‘একবারেই মেনে নেয়ার মতো না। তার কাছে অনেক ধরণের তথ্য ছিল। সে গুজব শুনেছে। গ্রামের সবাই জানে যে সর্বনাশ হয়েছিল আমার। আর এতে আমার করার মতো তেমন কিছুই ছিল না’। বলেন ক্যারিন। ‘আমার ছেলে জিজ্ঞাসা করতে থাকে যে তার বাবা কে। কিন্তু আমি বলতে পারিনি যে আমাকে সর্বনাশ করা ১০০ জন পুরুষের মধ্যে তার বাবা আসলে কে।’

আমি পালিয়ে যেতে পারিনি
১৯৯৪ সালে ১০০ দিনের আন্দোলনের সময় ঠিক কত শিশু জন্ম গ্রহণ করেছিলো তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। সংঘাত বা যুদ্ধ সম্পর্কিত অপরাধ বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘ- কারণ যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় মেয়েদেরকে। সিরিয়া থেকে শুরু করে কলোম্বিয়া কিংবা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে শুরু করে গত বছর মিয়ানমারেও মেয়েদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ক্যারিনের ঘটনা শুনলে বোঝা যায়, সত্য বলতে গিয়ে কেন তিনি তার ছেলে বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন।
প্রথম যখন তিনি সর্বনাশের শিকার হয়েছেন তখন তিনি তার ছেলের বয়সীই ছিলেন। তিনি ছিলেন তুতসি নারী এবং শিশুদের মধ্যে যারা হুতু প্রতিবেশী, যোদ্ধা আর সেনাদের হাতে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হয় সেই লাখো নারীদের একজন। তখন মাত্র শুরু হয়েছিলো। তখনো তার মুখের দুপাশে রামদা সদৃশ বস্তুর আঘাতে সৃষ্ট হতো। যার কারণে এখনো তার খেতে এবং কথা বলতে সমস্যা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.