কোথায় লুকিয়ে ছিলেন মোয়াজ্জেম!



গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রবিবার (১৬ জুন) শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। গত ২৭ মে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
এই সময়ের মধ্যে তার রংপুরের কর্মস্থল, যশোরের গ্রামের বাড়ি, কুমিল্লার বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েও তাকে পায়নি। ২৭ মে’র পর থেকে গত ১০ জুন পর্যন্ত রাজধানীর কল্যাণপুরে এক খালার বাসায় ছিলেন তিনি।
তবে, তাকে গ্রেফতারে গোয়েন্দারা সেখানেও যেতে পারেন, এমন আশঙ্কায় ওই বাসা থেকে তিনি সটকে পড়েন। রবিবার (১৬ জুন) গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে ওসি মোয়াজ্জেম নিজেই শাহবাগ থানা পুলিশ এমন তথ্য জানিয়েছেন।
গত ২০ দিন তিনি বিভিন্ন বন্ধু-স্বজনে কাছে আত্মগোপনে ছিলেন। তার ধারণা ছিল, ১৬ জুন উচ্চ আদালত খুলবে। এদিন হয়তো তিনি আগাম জামিন পাবেন। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা না দেখে আবারও আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
পুলিশের ধারণা ছিল, উচ্চ আদালত খোলার দিন মোয়াজ্জেম জামিনের জন্য চেষ্টা করতে পারেন। সেজন্য হাইকোর্ট এলাকায়ও নজরদারি বাড়ানো হয়। এছাড়া শুরু থেকেই তার স্বজনদের মোবাইল নম্বরও ট্র্যাকিং করা হচ্ছিল।
তিনি যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য স্থল ও বিমানবন্দরগুলোকেও সতর্ক থাকার জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহবাগ থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গত ১০ জুন পর্যন্ত রাজধানীর কল্যাণপুরে এক খালার বাসায় ছিলেন। গোয়েন্দারা তাকে খুঁজছেন, বিষয়টি টের সেখান থেকে সটকে পড়েন।
পরে সেখান থেকে চলে যান কুমিল্লা। সেখানে তার নিজের বাড়ি রয়েছে। কিন্তু তিনি ওই বাড়িতে না উঠে আত্মগোপন করেন চান্দিনায়। সেখানে তার খালাতো ভাই আসাদুজ্জামান রয়েছেন। আসাদুজ্জামান চান্দিনা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হিসেবে রয়েছেন।

কিন্তু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে ধরতে গত কয়েকদিন কুমিল্লায় অবস্থান করছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শুক্রবার (১৪ জুন) রাতে ওই বাসা থেকেও সটকে পরেন। সেখান থেকে তিনি আবার ঢাকায় চলে আসেন।
ঢাকায় এসে খালার বাসায় না উঠে অন্য এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন। সেখান থেকেই রবিবার উচ্চ আদালতে যান আগাম জামিনে আশায়। ওসি মোয়াজ্জেম কোনও মোবাইল নম্বরে কথা বলতেন না। বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে কথা বলতেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন কোথায় ছিলেন এ বাপারে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, যারা পলাতক থাকে, তারা তখন কি বলেন তারা কোথায় ছিলেন? ওসি মোয়াজ্জেম নিজের পরিচয় লুকিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।
এর আগে নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন তিনি।
এ ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দায়ের করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এরপর ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ওই আদালত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.