যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ফিরিয়ে’ দিলেন লঙ্কান প্রেসিডেন্ট
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো চুক্তি তার সরকার করতে দেবে না।
এই ঘোষণার মাধ্যমে মূলত দ্বীপ রাষ্ট্রটির বন্দর ব্যবহারে সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্যাটাস অফ ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোফা)’ নামে সামরিক চুক্তিকে তিনি নাকচ করে দিলেন বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রেসিডেন্ট জানান, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য প্রস্তাবিত ‘স্ট্যাটাস অফ ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোফা)’ নামে চুক্তির খসড়ার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার পশ্চিমামিত্র হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে চরম বিবাদ রয়েছে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার।
‘আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করে এমন কোনো চুক্তির অনুমোদন আমি দেব না,’ দেশটির দক্ষিণে এক জনসভায় বলেন সিরিসেনা।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন কয়েকটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, যা আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর।’
‘জাতির সঙ্গে বেঈমানি করতে চায় এমন সোফা চুক্তি আমি হতে দেব না। কিছু বিদেশি শক্তি শ্রীলঙ্কাকে তাদের ঘাঁটি বানাতে চায়। আমি সেসব দেশকে এদেশে এসে আমাদের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে কোনোভাবেই দেব না,’ যোগ করেন সিরিসেনা।
সোফা হলে দুই দেশ একে অপরের বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পেতো এবং সামরিক কর্মকর্তা ও তাদের কনট্রাক্টররা আরও অবাধে যাতায়াত করতে পারতেন।
সিরিসেনা জানান, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন ‘শ্রীলঙ্কার জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ কোনো চুক্তি করতে দিবেন না। তার ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবে আগামী জানুয়ারি মাসে।
সিরিসেনা কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তা নাম ধরে উল্লেখ না করলেও, যুক্তরাষ্ট্র যে সেখানে তাদের বিদ্যমান সামরিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করতে চাইছে, তা পষ্ট বলে জানায় এএফপি।
এক বছর আগে ওয়াশিংটন জানিয়েছিল, তারা শ্রীলঙ্কায় সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করতে ৩৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করছে।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপটিতে চীন ইতোমধ্যেই তাদের কৌশলগত অবস্থান উন্নত করেছে। চীনের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভের আওতায় এসব সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বন্দরে ও নির্মাণ প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয়ার পর দ্বীপটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেড়ে যায়। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্রা রাজাপাকশের সময় পরাশক্তিটি শ্রীলঙ্কার মানবাধিকারের অবনমনের চরম সমালোচনা করে।
রাজাপাকশে সরকারের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
দ্বীপ রাষ্ট্রটির ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার পরও চীন ঋণসহ বিভিন্ন অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চীনের দেয়া ১৪০ কোটি ডলার সহায়তা ফেরত দিতে না পারায় ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা বেইজিংকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হাম্বান্টোটা ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয়।
পূর্ব থেকে পশ্চিম জাহাজ চলাচলের সবচেয়ে ব্যস্ত জলপথে রয়েছে হাম্বান্টোটা। ভারত দীর্ঘদিন আধিপত্য বিস্তার করে ছিল এমন অঞ্চলে ওই বন্দরটি চীনকে কৌশলগত অবস্থান নিতে দিয়েছে।


কোন মন্তব্য নেই